ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগে ভুল – পর্ব ৪

২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে আমি ফাইবারে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে হুরমুড়িয়ে কাজ পাওয়া শুরু করি আর এখন কিভাবে কাজ পাওয়া যায়?

এই সময়টা ছিল ফাইবারের স্বর্ণযুগ কারণ তখন যে একাউন্ট খুলবে তো সেই দুই থেকে একদিনের মধ্যেই অটোমেটিকেলি কাজ পাবে। কোন যোগ্যতা বা কোনো কিছুরই দরকার ছিল না। আর যদি কেউ ভুল করেও একটি রিভিউ নিতে পারত তাহলে এক সপ্তাহের মিনিমাম 1000 ডলার আয় করা সম্ভব ছিল।

1000 ডলার তো আমি খুব কম বলে ফেললাম মনে হয়।

SadeQur Rahman Sumon ভাই Fiverr Help Bangladesh গ্রুপের সব থেকে সিনিয়র এডমিনদের একজন, সাথে আমাদের প্রথম দিককার সিনিয়র একজন অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সার কিন্তু উনার সব থেকে মজার ব্যাপার হলো ফাইবার উনাকে টাকা দিয়ে ইনভাইট করে কাজ করিয়েছিল ?

এমনি এমনি উনি অ্যাকাউন্ট তৈরি করেননি, উনাকে ফাইবার একাউন্ট তৈরীর জন্য টাকা দিয়েছিল।

ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং না?

উনার সাথে দেখা হলে কখনো তাহলে স্টরি টা জিজ্ঞাসা করে নেবেন ?

সেই দিন আজ আর নেই অবশ্য, এখন অনেক কম্পিটিশন এবং অনেক যোগ্যতা ইনসিওর করেই কাজ করতে হয়। তবে এখনও হুড়মুড়িয়ে কাজ পাওয়া যায়।

তো যাই হোক, অ্যাকাউন্ট খোলার এক সপ্তাহের মধ্যে আমি এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে একটা রিভিউ নেই এবং তার পরের সপ্তাহের মধ্যে আমার প্রথম 40 ডলার আয় হয়।

তারপর ব্যাক ফিডব্যাক পাওয়ার কারণে কাজ আসা বন্ধ হতে থাকে।

এখন কথা হচ্ছে এই 40 ডলার এর জন্য আমাকে টোটাল ১০ টি অর্ডার কমপ্লিট করতে হয়। তার মানে প্রতি অর্ডার পাঁচ ডলার করে চার্জ কাটার পর 40 ডলার।

এই টাকা কামাইয়া তো আমি মহা খুশি, এখন ভাবতে পারেন দশটি অর্ডার কমপ্লিট করে মাত্র চল্লিশ ডলার?

ওই টাইমে তো আমি থিম ইন্সটল করা ছাড়া কোনো কাজই পারতাম না ক্লায়েন্টকে কোনরকম পেইজ এর মধ্যে টেক্সট ইমেজ বসাই দিয়ে ই খালাস। ?

পেইজটির ডিজাইন করতে হয় তা আমার সেন্সেই ছিল না। আরে ক্লায়েন্টগুলো এমন বলদ এর বলদ যে এরাও কিছু বুঝতো না।

কিন্তু দু’একজন বুঝতো এবং তাদের রিকোয়ারমেন্ট ফুলফিল করতে চাইতো তখন আমি তাদেরকে ঝাড়ি দিয়ে বলে দিতাম আর তারপর ফোর্স করতাম অর্ডার টা কমপ্লিট করে দাও তো অর্ডার কমপ্লিট হতো কিন্তু ব্যাক ফিডব্যাক পড়ে যেত।

এভাবে প্রায় দুই থেকে তিনটা একাউন্ট ক্রিয়েট করি এবং তারপর বুঝতে পারি যে এভাবে কতদিন?

ভাবতে থাকি যে আমার যোগ্যতার অভাব কোথায়? কেন আমাকে ব্যাড ফিডব্যাক দেওয়া হচ্ছে?

তাছাড়া আমার কি গুলোতে ছিল এসইও এবং ওয়াডপ্রেস দুইটির কম্বিনেশনে কাজ।

তাই অনেক ক্লায়েন্ট ও কনফিউজ হয়ে যেত।

এখন কথা হচ্ছে যে অনেকেই স্কিল ডেভলপমেন্ট করে হয়তোবা মার্কেটপ্লেসে আসেন অথবা স্কিল ডেভেলপমেন্ট ছাড়াও আমার মত অনেকেই মার্কেটপ্লেসে আসেন আসলেই একটি ব্যাপার যদি না থাকে তাহলে স্কিল থাকুক আর না থাকুক আপনি মার্কেটপ্লেসে টিকতে পারবেন না।

কারণটি হচ্ছে আপনি জানেন না আপনি কি করবেন!!

আসলে আমরা যখন ফাইবারে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে গীগ বানাই তখন কিছু ভুল করে থাকি আর সেই ভুলগুলোর প্রথম ভুল হচ্ছে আমাদের গোল এবং আমাদের টার্গেট ঠিক থাকেনা।

ধরেন আপনি একজন ওয়েব ডিজাইনার এবং আপনি ওয়ার্ডপ্রেসে ওয়েবসাইট ডিজাইন করেন।

আপনার মাথায় এখন গিগ রিসার্চ করে হোক আর যেভাবেই হোক একটি জিনিসই মাথায় আসে “I will create website in WordPress”

আর এখানেই প্রবলেমটা শুরু হয় কারণ আপনি দুনিয়ার যত ওয়েবসাইট আছে সব ওয়ার্ডপ্রেসে তৈরি করার বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন।

একটু ভালো করে ভেবে দেখুন আপনি কি দুনিয়ার সব ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারেন? আপনি কি ওয়ার্ডপ্রেসের সব কাজ বুঝেন? আপনি কি দুনিয়ার সব টাইপের ওয়েবসাইট ডিজাইন করেছেন?

উত্তর হবে শুধু না!!

যখন গিগ তৈরি করবেন তখন অবশ্যই আপনাকে স্পেসিফিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে ওয়ার্ডপ্রেসে একজেক্টলি কোন কাজটা আপনি ভালো পারেন আর সেই কাজের উপর দিয়ে তৈরি করবেন।

আপনি অবশ্যই কোন না কোন স্পেসিফিক কাজে স্পেশালিস্ট, কখনোই আপনি দুনিয়ার সব বিষয় নিয়ে স্পেশালিস্ট হতে পারবেন না।

আপনি যে সকল স্কিল ডেভেলপ করেছেন তার মধ্যে একটি লিস্ট করুন যে কোন কাজটি আসলে আপনি খুব ভালোভাবে পারেন তখন দেখবেন কিছু স্পেসিফিক লিস্ট আসবে।

এই লিস্ট নিয়ে ফাইবারে সার্চ করুন তখন দেখবেন ওই সকল কাজের জন্য কম্পিটিশন অনেক ক্ষেত্রেই কম হয়ে গিয়েছে তখন ওই টাইপ যদি গিগ তৈরি করেন তাহলে খুব সহজেই কাজ পাবেন।

আরেকটু সহজ করে বলি একটি মুদির দোকানে অনেক ধরনের পণ্য থাকে এখন দশটি মুদির দোকান আছে সবগুলো মুদির দোকানে আপনি সব ধরনের পণ্য পাবেন কিন্তু এখন যদি আপনি অলিভ অয়েল যেটা অনেক দামি সেটা আপনার দোকানে রাখেন তাহলে দেখবেন মাঝেমধ্যে কিছু কাস্টমার আসবে যাদের এই অলিভ অয়েল তেল টি দরকার।

কথা হচ্ছে যাদের ডায়াবেটিস আছে অথবা ডায়েট কন্ট্রোলের প্রয়োজন তারা অলিভ অয়েল তেল ব্যবহার করে।

তো এই ধরনের মানুষের সংখ্যা কম হলেও এই ধরনের মানুষ অলিভ অয়েল কেনার জন্য যেকোনো সুপারশপে যাবে অথবা তাকে দূরে কোথাও যেতে হবে।

কিন্তু এই তেলের কয়েকটা বোতল যদি আপনার কাছে থাকে তাহলে আপনার কাছেই আসবে এবং এই তেলের দাম বেশি হল আপনার কাছ থেকে কিনে নিবে।

যদি ধরেন কেউ নাও কিনে আপনি তাদেরকে বুঝিয়ে দিতে পারবেন যে কেন এই তিনটি তাদেরকে না প্রয়োজন তাহলে দেখবেন আস্তে আস্তে এর উপকারিতা পেলে এমনি কাস্টমার বাড়তে থাকবে।

আপনার কি মনে হয় এই উপায়ে যদি আপনি ফাইবার মার্কেটপ্লেস এ কাজ করেন তাহলে কি কাজ পাবেন না? গিগ তৈরি করলে গিগে মেসেজ আসবেনা?

প্রশ্নের উত্তর কমেন্টে জানাবেন অবশ্যই আর যারা কমেন্ট করবেন তাদের কথা আমি অবশ্যই মাথায় রাখবো সামনে হয়তোবা কোন উপহার থাকতে পারে।

To Be Continued……

Prince Chowdhury

Started Freelancing Career since 2012 and Converted as an Entrepreneur, Business Coach & Marketing Strategy Enthusiast
Join Our Community:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Popular post