আপনি ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে চাচ্ছেন , কিন্তু কিছু ভুলের জন্য আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারের ইতি টানতে হতে পারে। নতুন/ পুরাতন ফ্রিল্যান্সাররা কিছু সাধারণ ভুল করেন যা তার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দেয়। তাই সেই ভুলগুলো কি তা জেনে নিলে আপনি সেগুলো এড়িয়ে চলতে পারবেন।
আজকের আর্টিকেলে এমন ৫ টি ভুল নিয়ে কথ আ বলবো, যা এড়িয়ে চলতে পারলে আপনি ফ্রিল্যান্সিং করে সফলতা অর্জন করতে পারবেন। তাই কোন অংশ বাদ না দিয়ে পড়ুন পুরো লেখাটি।
১) না বুঝে স্কিল ডেভেলপ করা
কোন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন, দক্ষতায় কোন দুর্বতলতা থাকলে তা দূর করা এবং দক্ষতার বিকাশের প্রক্রিয়াকে স্কিল ডেভেলপমেন্ট বলে। ফ্রিল্যান্সিং এ সফল হতে হলে স্কিল ডেভেলফপেন্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও লক্ষ্য রাখতে হবে আপনি যে কাজ সম্পর্কে জানেন, যে কাজ করার আগ্রহ আছে, যে কাজের চাহিদা রয়েছে এবং আপনি যে কাজ করতে পছন্দ বা স্বাচ্ছন্দবোধ করেন এবং ভবিষ্যৎ এ কাজ করতে পছন্দ করবেন।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় নতুন ফ্রিল্যান্সাররা সফল ফ্রিল্যান্সারদের দেখে উদ্বুদ্ধ হন এবং কোন কিছু না বুঝেই সফল ফ্রিল্যান্সারদের দেখা দেখি এমন স্কিল ডেভেলপমেন্ট করতে শুরু করেন যা নিয়ে তার কোন ধারণা নেই । তাই স্কিল ডেভেলপমেন্ট শুরু করার কিছু দিন পর কাজ শুরু করার আগেই তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এই ভুলের কারণে অকালে ঝড়ে যাচ্ছে অসংখ্য ফ্রিল্যান্সার। তাই নিজের ইচ্ছাশক্তি ও মনোবল কাজে লাগিয়ে বুঝে শুনে এমন স্কিল ডেভেলপমেন্ট করতে হবে, ধৈর্য ধরে কাজ চালিয়ে যেতে হবে তবেই আপনি ফ্রিল্যান্সিং করে সফল হতে পারবেন।
২) মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে না জেনে মার্কেটপ্লেসে কাজ পাওয়ার আশা করা
একটি মার্কেটপ্লেস এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে বিক্রেতারা তাদের পণ্য বা পরিষেবাগুলি কোনও ক্লায়েন্টের কাছে বিক্রয় করতে একত্রিত হতে পারেন। মার্কেটপ্লেসের মালিক প্রতিটি বিক্রয় থেকে কমিশন নেন। নতুন ফ্রিল্যান্সারদের অধিকাংশ তাদের প্রথম বা বেশিসংখ্যক কাজ অনলাইন মার্কেটপ্লেসে থেকে পেয়ে থেকেন। তাই মার্কেটপ্লেসে কাজ শুরুর আগে এর সম্পর্কে খুঁটিনাটি সকল বিষয়ে জেনে নেয়া জরুরী।
সরাসরি মার্কেটপ্লেসে কাজ শুরু করার আগে অবশ্যই আপনি কোন কোন মার্কেটপ্লেসে কাজ করবেন তা নির্বাচন করতে হবে। সেই সব মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে ভালো ভাবে জানতে হবে। কিভাবে প্রোফাইল তৈরি করতে হয়, কি কি তথ্য দিতে হয়, কিভাবে ক্লায়েন্ট পাওয়া যায়, কিভাবে ক্লায়েন্টের কাছ থেকে ৫ স্টার রেটিং পাওয়া যায়, আয় করলে তা কিভাবে উত্তোলোন করতে হবে ইত্যাদি বিষয় ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। প্রয়োজনে আপনার পছন্দের মার্কেটপ্লেসে আগে থেকে কাজ করেন এমন ফ্রিল্যান্সারের কাছ থেকে এসব বিষয়ে জেনে নিতে হবে। তা না হলে যদি আপনি কোন কিছু না জেনে না বুঝে মার্কেটপ্লেসে কাজ শুরু করেন তাহলে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। ক্লায়েন্ট না পাওয়া, কাজ পেলেও ক্লায়েন্টের কাছ থেকে ভালো রেটিং না পাওয়া এমনকি কিছু ভুলের জন্য মার্কেটপ্লেসে আপনার আইডি ব্লক হয়ে যেতে পারে। ফলে চরম হতাশ হয়ে আপনি ফ্রিল্যান্সিং থেকে ঝড়ে পড়তে পারেন।
৩) মার্কেটপ্লেসের বাহিরে নিজের একটি ক্লায়েন্ট জেনারেটিং প্রসেস তৈরি না করা
ক্লায়েন্ট হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং এর প্রান। অনলাইনে বা অফলাইনে যারা ফ্রিল্যান্সারের কাছ থেকে পরিষেবা গ্রহন করেন তাদের বলা হয় ক্লায়েন্ট। একজন দক্ষ ফ্রিল্যান্সারও যদি ক্লায়েন্ট না পায় তাহলে তার দক্ষতার কোনই মূল্য থাকেনা। ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে মাল্টি টাস্কিং , একই সাথে আপনাকে কয়েকটি কাজ করতে হবে তবেই আপনি সফল ফ্রিল্যান্সার হতে পারবেন।
অধিকাংশ ফ্রিল্যান্সার তাদের কাজের সূচনা করেন অনলাইন মার্কেটপ্লেসে। দীর্ঘদিন মার্কেটপ্লেসে কাজ করার পর একটা সময় নতুন ক্লায়েন্ট পাওয়া যায় না এবং পুরাতন ক্লায়েন্টের কাছ থেকেও আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায় না। তাই মার্কেটপ্লেসের সাথে সাথে মার্কেটপ্লেসের বাইরেও ক্লায়েন্ট জেনারেট করতে হবে। মার্কেটপ্লেসের বাইরে ক্লায়েন্টের সাথে ভালো শখ্যতা গড়ে তোলা, তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করা। এতে ক্লায়েন্টের কাছ থেকে কাজ আসার ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।
৪) ভালো পোর্টফলিও তৈরি না করে শুধু ক্লায়েন্টকে সার্ভিস দেওয়া
পোর্টফলিও হচ্ছে এমন কিছু নথি বা তথ্য যা কোন ব্যক্তির অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, অর্জন এবং গুণাবলি উপস্থাপন করে। কোন ব্যক্তি তার দক্ষতা দিয়ে কি কি অর্জন করেছেন বং কি কি কাজ করেছেন তার উদাহরণ থাকে পোর্টফলিওতে।
ক্লায়েন্টেদের কাজ করার পাশাপাশি একজন ফ্রিল্যান্সারের গুরুত্বপুর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে ভালো একটি পোর্টফলিও তৈরি করা। যাতে উল্লেখ্য থাকবে ফ্রিল্যান্সারের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা সম্পর্কে। উল্লেখ্যোগ্য কোন ক্লায়েন্টের কাজ বা কোন প্রকল্পে সফলতার সাথে কাজের তথ্য। ফ্রিল্যান্সারের কাজে সন্তুষ্ট ক্লায়েন্টের প্রশংসাপত্র। একটি ভালো পোর্টফলিও ফ্রিল্যান্সারকে নানান সুবিধা দিবে। নতুন ক্লায়েন্ট পাবার সাথে সাথে বড় প্রকল্পে কাজের সুযোগ করে দিতে পারে একটি সঠিক তথ্য সমৃদ্ধ পোর্টফলিও। অনেক ফ্রিল্যান্সার ক্লায়েনটের কাজ সফল্ভাবে সম্পন্ন করাকেই নিজের দায়িত্ব মনে করেন কিন্তু তার পোর্টফলিও তৈরি করাও তার একটি বড় দায়িত্ব। যা তাকে সফলতার চূড়ায় পৌঁছে দিবে।
৫) কাজের প্রতিনিয়ত মার্কেটিং না করা
মার্কেটিং হলো কিছু কর্মকান্ড বা প্রক্রিয়া। যার মাধ্যমে ক্লাইয়েন্টকে তার প্রত্যাশিত কোন কিছু তৈরি , যোগাযোগ, বিরতরণ এবং আদান প্রদানের অফার। প্রত্যাশিত ক্লায়েন্টের কাছে পৌঁছার জন্য মার্কেটিং এর বিকল্প নেই।
সঠিক পরিকল্পনা, নিজের ব্র্যান্ডিং, ব্লগিং, এসইও এবং নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে মার্কেটিং করা যায় এবং ক্লায়েন্টের নজরে আসা যায়। একজন ফ্রিল্যান্সার কি কাজ করছেন কি কন্টেন্ট তৈরি করছে সেই জিনিসগুলি সবসময় মার্কেটিং করা জিরুরি। যাতে একই ধরনের পরিষেবা প্রত্যাশি ক্লায়েন্ট তাদের কাঙ্ক্ষিত পরিষেবা নিতে পারেন এবং ফ্রিল্যান্সারও কাজ পান।
৬) ফ্রিল্যান্সিং কে ব্যবসা হিসেবে না ধরে পার্ট টাইম অথবা চাকরি হিসেবে ধরা
ফ্রিল্যান্সিং অর্থ মুক্ত পেশা। ফ্রিল্যান্সিংয় হচ্ছে অন্য কারও দ্বারা নিযুক্ত হওয়ার চেয়ে স্বতন্ত্র সংস্থা হিসাবে কাজ করা। যারা ফ্রিল্যান্সিং পেশায় যুক্ত তাদের ফ্রিল্যান্সার বলা হয়। ফ্রিল্যান্সাররা নিজের পছন্দমত স্থান থেকে কাজ করেন এবং স্বতন্ত্র ঠিকাদার হিসাবে পরিচিত।
ছাত্র অবস্থায় কিংবা চাকুরির পাশাপাশি পার্ট টাইম আপনি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন। কিন্তু সফল ফ্রিল্যান্সার হতে আপনাকে ফ্রিল্যান্সিংকে ব্যবসা হিসেবে নিতে হবে। আপনার দক্ষতা এবং সময় বিনিয়োগ করে আপনি সফলতা পাবেন। কিন্তু অনেক ফ্রিল্যান্সার একে শুরু চাকরি হিসেবে ধরে থাকেন এবং পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন না , ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ করেন না সঠিক সময়, সঠিক সময়ে কাজ সম্পন্ন করেন না এবং সম্পন্ন করা কাজে ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী পরিবর্তন করতে দেরি করেন। এবং এক সময় তারা ক্লায়েন্টের থেকে দূরে চল যায় , নতুন ক্লায়েন্ট খুঁজে পায়না, ক্লায়েন্টের সন্তুষ্টি পান না , ক্লায়েন্ট থেকে আশানুরূপ রেটিং পান না, প্রোফাইলের ইম্প্রেশন কমে যায় । এসব সমস্যার সম্মুখীন হয়ে অকালে অল্প সময়ে ঝড়ে পড়েন।
এগুলো সেইসব ভুল যা ফ্রিল্যান্সারদের তাদের ক্যারিয়ার ছেড়ে দিতে এবং চাকরিতে ফিরে যেতে বাধ্য করে। তাই জেনে বুঝে সঠিক পরিকল্পনা করে কাজ করুন। এই ভুল করবেন না। এই সাধারণ ভুলগুলো এড়িয়ে চললে আপনি আরও ভাল ফ্রিল্যান্সার হতে পারবেন।
One Response
Great and helpful post. Thank you