ফ্রীল্যান্সারদের লং-টার্ম ক্লায়েন্ট পাওয়ার সিক্রেট স্ট্রেটেজি

আমরা মনে করি লং টার্ম ক্লায়েন্ট মানে হচ্ছে রিমোট ফ্রিল্যান্সিং জব অথবা কোন এজেন্সি ক্লায়েন্টের লং টার্ম বিভিন্ন কাজ করা।

অনেকেই মনে করি যে মার্কেটপ্লেস এর ক্লায়েন্ট কখনোই লং টার্ম ক্লায়েন্ট হয় না অথবা লং টার্ম ক্লায়েন্ট পেতে ভাগ্য লাগে। কিন্তু আসলে পুরো জিনিসটাই সম্পূর্ণ ভুল ধারণা !

কিন্তু আমরা যদি একটু লক্ষ্য করি বড় কোম্পানি গুলো কিভাবে যেকোনো প্রোডাক্ট বা সার্ভিস এর জন্য একটি ক্লায়েন্ট বা কাস্টমারকে লং টার্ম ক্লায়েন্ট অথবা লয়াল কাস্টমারে রূপান্তর করে তাহলে দেখতে পাবো যে এর চিত্রটাই ভিন্ন।

উদাহরণস্বরূপ যদি ওয়ালটন কোম্পানির কথা বলি তাহলে দেখবেন এদের বিভিন্ন ধরনের বিভিন্ন প্রাইস রেঞ্জের প্রোডাক্ট রয়েছে এবং আমাদের বাংলাদেশে ওয়ালটনের কাস্টমার কোন না কোন ভাবে, কোন না কোন প্রোডাক্ট কিনেই যাচ্ছে। বলতে পারেন আমরা বর্তমানে ওয়ালটনের লয়াল কাস্টমার। 

তাহলে কিভাবে এই কোম্পানি গুলো লয়াল কাস্টমার অথবা লং টার্ম ক্লায়েন্ট তৈরি করে?

কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং সার্ভিস এর জন্য আপনি প্রোডাক্ট ব্রেক ডাউন তৈরি করবেন যা দ্বারা আপনি যেকোন ক্লায়েন্টকে একটি লং টার্ম ক্লায়েন্টে রূপান্তর করতে পারেন?

আজকে আমরা ২ টি সিক্রেট প্রসেস জানবো যা দ্বারা আপনি লাইফ টাইম যে কোন সার্ভিসের জন্য লং টার্ম ক্লায়েন্ট তৈরি করতে পারবেন মার্কেটপ্লেস এবং মার্কেটপ্লেস এর বাহিরে।

  • MVP মডেল যা দ্বারা ছোট থেকে বড় প্রোডাক্ট ফানেল তৈরি করে সব ধরনের প্রাইস রেঞ্জে আপনি সার্ভিস দিতে পারবেন।
  • কিভাবে বায়ার সাইকোলজি অনুযায়ী সার্ভিসে অফার তৈরি করবেন যা ক্লায়েন্ট রিজেক্ট করতে পারবেনা। 
 

MVP মডেল দ্বারা পারফেক্ট প্রোডাক্ট ফানেল তৈরি করা:

আমরা যখন ফ্রিল্যান্সিং ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করি তখন আমরা দেখি একেকজন ক্লায়েন্ট একেক ধরনের সার্ভিস ডিমান্ড করে থাকে তখন আমরা অনেকটাই কনফিউজ হয়ে যায় এবং প্রতিটা ক্লায়েন্টকেই একেক ধরনের সার্ভিস দিতে থাকি।

মূলত আপনাকে দুই ধরনের প্রোডাক্ট ফানেল রাখতে হবে যা দ্বারা আপনি ক্লায়েন্টকে সার্ভিস প্রদান করবেন।

  • Front-End প্রোডাক্ট ফানেল
  • Back-End প্রোডাক্ট ফানেল
 

ধরুন আপনি ফাইভারে যে গিগ গুলো তৈরি করেন অথবা আপওয়ার্ক প্রোফাইল তৈরি করে সার্ভিস দিয়ে থাকেন এগুলো হচ্ছে ফ্রন্ট এন্ড প্রোডাক্ট বা সার্ভিস ফানেল। কারণ হচ্ছে আপনার বিজনেসের ফ্রন্টডেস্কে  এগুলো দেখেই একজন ক্লায়েন্ট আপনার সার্ভিস পারচেজ করতে আসে।

এগুলো দ্বারা আপনি বায়ার অথবা ক্লায়েন্ট আপনার বাস্কেটে নিয়ে আসতে পারেন যাকে বায়ার কনফার্মেশন বলে।  এখন সে যদি আপনার Front-End এর কোন প্রোডাক্ট বা সার্ভিস কিনে ফেলে তখন আপনি তাকে Back-End সার্ভিস অফার করবেন।

Back-End সার্ভিসে ক্লায়েন্ট জানে না অথবা প্রথমেই দেখতে পায় না তাই আপনার ক্লায়েন্ট যখন Front-End প্রডাক্ট বা সার্ভিস কিনে নিবে ঠিক তখন ক্লায়েন্টের চাহিদা বুঝে পরীক্ষা করে তাকে আপনার Back-End প্রোডাক্ট অফার করতে হবে।

যদি এখানে আমি টেলিকোম্পানি গুলোর উদাহরণ দেই তাহলে ধরুন গ্রামীণফোনগ্রামীণফোন প্রথমে আপনাকে ১০০ টাকায় অথবা ১৫০ টাকার মধ্যে সিম প্রদান করে যাতে করে আপনি মানুষের সাথে ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারেন। এটা কে আপনি ফ্রন্ট এন্ড প্রোডাক্ট ভাবতে পারেন।

আপনি যখন তাদের গ্রাহক হয়ে যান তখন থেকে তারা প্রোডাক্ট অফার করা শুরু করে যেমন হাই স্পিড ইন্টারনেট, মেসেজ বান্ডেল, টক টাইম ইত্যাদি।

এরপরে তারা ক্ষ্যান্ত হয় না, তারা আপনাকে লাইফ ইন্সুরেন্স, বীমা আরো অনেক ধরনের অফার করে থাকে তাদের কাস্টমার সাপোর্ট থেকে কল করে আর আপনি সেগুলো লুফে নিয়ে থাকেন যার মাধ্যমে তারা কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করে থাকে। 

আশা করি বুঝতে পেরেছেন যে ফ্রন্টেন্ড এবং ব্যাকএন্ড প্রোডাক্ট আপনার ফ্রিল্যান্সিং বলেন আর অন্য যে কোন সার্ভিস বলেন সব জায়গাতেই প্রযোজ্য। 

তাহলে কিভাবে আপনি এই  Front-End এবং Back-End প্রোডাক্ট তৈরি করবেন?

এর জন্য পুরো দুনিয়াতে যেকোনো স্টার্টআপ অথবা বিজনেস শুরুর ক্ষেত্রে MVP মডেল ব্যবহার করা হয় যাকে বলা হয় Minimum Viable Product। 

এখানে আপনি প্রথমে শুরু করবেন একটি আইডিয়া নিয়ে এবং সেটা আপনি কাস্টমারের চাহিদা অনুযায়ী সার্ভিস দিয়ে টেস্ট করে এবং কাস্টমারের প্রয়োজনীয়তা জেনে আপনার প্রোডাক্ট কে আপডেট করবেন। 

MVP মডেল অনুযায়ী সার্ভিস তৈরি করার অনেক নিয়ম আছে এই আর্টিকেলে আমি শর্টলি শুধু বোঝানোর চেষ্টা করছি।

নিচে ফেসবুক কিভাবে MVP মডেল ব্যবহার করে নিজের প্রোডাক্ট গুলো আপডেট করেছে তার চিত্র দেখে নিন।

ধরুন আপনি একজন লোগো ডিজাইনার, অনেক সময় দেখবেন লোগো ডিজাইনের পর ক্লায়েন্ট এসে আপনাকে বলে যে তুমি কি আমাকে ওয়েবসাইট বানিয়ে দিতে পারবে?

ঠিক এভাবে আপনি জানতে পারেন যে ক্লায়েন্ট লোগো বানানোর পর ওয়েবসাইট চাইতে পারে তাই আপনি ক্লায়েন্টের কাছে নেক্সট গোল অথবা তার ডাটা সার্ভে করে আপনি তাকে নেক্সট কি সার্ভিস দিবেন সেটা ভাবতে পারেন।

কাস্টমার কখন কী নিবে তা বুঝার জন্য আপনাকে কাস্টমার জার্নি বা CVO সম্পর্কে জানতে হবে যাকে বলা হয় Customer Value Optimization আপনি তখন প্রোডাক্ট বা সার্ভিস এর আপডেট অনুযায়ী প্রাইসিং প্যাকেজ তৈরি করবেন।

প্রাইস অথবা প্যাকেজ তৈরি করার দুটি ফর্মূলা আছে। প্রথম হচ্ছে লো টিকেট প্রাইসিং এবং হাই টিকেট প্রাইস

এই দুটি ফর্মূলা আমি অন্য কোন আর্টিকেলে লেখার চেষ্টা করব আর আপনি আপাতত আপনার নিজের চাহিদা এবং ভ্যালু অনুযায়ী সার্ভিস প্যাকেজ করে প্রাইস বাড়াতে পারেন।

কিভাবে সার্ভিসের প্রাইস বৃদ্ধি করতে হয়? – লং-টার্ম ফ্রীল্যান্সিং বিজনেস পর্ব 3

কিভাবে ক্লায়েন্ট সাইকোলজি অনুযায়ী আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস অফার করবেন?

অফার মানে শুধু ডিসকাউন্ট অফার অথবা আপনার সার্ভিসের বর্ণনা না, এর অর্থ একটু ডিফ্রেন্ট

প্রথমে বুঝতে হবে যে অফার কিভাবে তৈরি করে?

অফার তৈরির ফর্মূলা হচ্ছে:

Problems + Solution + Results = Offer

এর অর্থ হচ্ছে আপনার ক্লায়েন্টের সমস্যা অনুযায়ী সলিউশন তৈরি করা এবং সেই সলিউশন দিলে আপনার ক্লায়েন্টের বিজনেসে কি ধরনের রেজাল্ট আসবে অথবা ইমপ্রুভমেন্ট হবে সেই ইমপ্রুভমেন্ট টাই হচ্ছে আপনার অফার।

এর বিস্তারিত নিচের ভিডিওতে দেখতে পাবেন 

তাহলে কিভাবে লং টার্ম ক্লায়েন্টের জন্য বিভিন্ন সার্ভিসের অফার তৈরি করবেন?

কাস্টমারের জার্নি বোঝে আপনাকে দুই-ধরনের সিরিয়াল অফার তৈরি করতে হবে। 

এক হচ্ছে Upsell এবং আরেকটি হচ্ছে Cross-sell

Upsell এর ধরন হচ্ছে আপনি লোগো ডিজাইন সার্ভিস যদি দিয়ে থাকেন তাহলে লোগো ডিজাইন সার্ভিসের রিলেটেড সার্ভিসগুলো দিবেন যেমন Brand Identity, Print Design, Social Media Design ইত্যাদি। 

Cross-Sell হচ্ছে লোগো ডিজাইন এর সাথে অন্য ডিফ্রেন্ট সার্ভিসগুলো যেমন মার্কেটিং, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি। 

নিচের ডায়াগ্রামটি থেকে আশা করি সম্পূর্ণ ক্লিয়ার হয়ে যাবেন।


এখন কথা হচ্ছে ক্লায়েন্টের সাইকোলজি বুঝে সার্ভিস অফার করা!

ক্লায়েন্ট সাধারণত তিন ধরনের হয়ে থাকে  কোল্ড, ওয়ার্ম এবং হট

কোল্ড ক্লায়েন্ট এর অর্থ হচ্ছে সে কোন একটা সমস্যায় আছে কিন্তু সে জানেনা এটার সলিউশন কি।

যেমন ধরুন ক্লায়েন্ট তার ওয়েবসাইটে ট্রাফিক পাচ্ছে না এখন সে আপনাকে এসে জিজ্ঞাসা করছে তার ওয়েবসাইটে ট্রাফিক কিভাবে নিয়ে আসবে। কিন্তু সে জানে না এসইও অথবা ফেসবুক অ্যাড এর মাধ্যমে ট্রাফিক আনা সম্ভব যা আপনি তাকে বোঝাবেন।

ওয়ার্ম ক্লায়েন্ট  হচ্ছে যে জানে যে তার সমস্যা কি এবং সমাধান কি। যেমন এই ধরনের ক্লায়েন্ট এসে আপনাকে বলবে যে আমাকে SEO করে ট্রাফিক এনে দিতে হবে।

আর হট ক্লাইন্ট হচ্ছে যে জানে তার প্রবলেম কি এবং তার সলিউশন কি এবং সে ওই প্রবলেম সমাধান করে কি ধরনের রেজাল্ট চাচ্ছে। 

মানে একজন ক্লায়েন্ট এসে বলবে যে তাকে এসইও করে ট্রাফিক এনে সেল করে দিতে হবে। 

এই ধরনের ক্লায়েন্ট সবসময় বায়িং মোড অন রাখে যারা আপনার সার্ভিস ইনস্ট্যান্টলি কিনে নিবে।

ক্লায়েন্ট সম্পর্কে আরো বিস্তারিত সম্পূর্ণ ডিটেইলস সাইকোলজি বুঝার জন্য আমাদের একটি ফ্রি ই-বুক আছে সেটি পড়ে নিলে আপনি সম্পূর্ণ ক্লিয়ার হয়ে যাবেন যে কীভাবে, কোথায় এবং কেমন করে ক্লায়েন্ট হান্ট করতে হয়।

“The Get Clients” Free Ebook Download

কাস্টমারকে তার বায়িং মুড অনুজায়ি তাকে বিভিন্ন সার্ভিস অফার করতে হবে আর অফার করার জন্য আপনার সার্ভিসের প্যাকেজ, প্যাকেজিং এবং প্রাইস সবকিছুই আগে থেকে ঠিক করে রাখতে হবে নাহলে ক্লায়েন্টকে বোঝানোর সময় দেখবেন আপনি নিজেই কনফিউজ হয়ে যাচ্ছেন। 

একটি লং-টার্ম ক্লায়েন্ট সবসময় একটি প্রসেসিং মেইন্টেইন করা পছন্দ করে যেমন প্রজেক্ট এর প্রপোজাল, প্রেজেনেটেশন ডকুমেন্ট, কন্ট্রাক্ট, ফলোআপ ইত্যাদি। 

আপনি যদি ফুটপাতে কোন কিছু কিনেন তাহলে দেখবেন তারা শুধুমাত্র টাকা নিয়ে আপনাকে পণ্যটা হাতে দিয়ে দিবে, না থাকবে কোন রিসিপ্ট আর না কোন ভালো শপিং ব্যাগ। 

কিন্তু আপনি একটি ব্র্যান্ডের দোকানে যদি কিছু কেনাকাটা করেন তাহলে দেখবেন তারা বিল নেওয়া থেকে শুরু করে আপনাকে বের হয়ে যাওয়ার গেইট পর্যন্ত দারোয়ান একটি প্রসেস মেইন্টেইন করে চলবে যা দ্বারা একটি কাস্টমার স্পেশাল ফিল করে প্রতিনিয়ত সেই দোকান বা ব্র্যান্ডের থেকে কিনে। 

পরবর্তী আর্টিকেলে আমরা শিখবো সেলিং প্রসেস যার মাধ্যমে আপনি যে কোন ক্লায়েন্টকে ধরে রাখতে পারবেন এবং ক্লায়েন্ট আপনার সার্ভিস প্রতিনিয়ত লয়াল কাস্টমার এর মত নিতে থাকবে।

যদি আর্টিকেলটি ভালো লাগে তাহলে শেয়ার দিবেন এবং কমেন্ট করে আপনার মতামত জানাবেন ।

Prince Chowdhury

Started Freelancing Career since 2012 and Converted as an Entrepreneur, Business Coach & Marketing Strategy Enthusiast
Join Our Community:

One Response

  1. অনেক ভাল লাগলো ফ্রিল্যান্সার দের কাজে আসবে, আশাকরি সামনে আরও সুন্দর সুন্দর আর্টিক্যাল পাব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Popular post