পারফেক্ট ফ্রীল্যান্সার হিসেবে যা যা থাকা প্রয়োজন আর যা আমাদের নেই – লং-টার্ম ফ্রীল্যান্সিং বিজনেস পর্ব ২

বেশিরভাগ সময় অনেক ফ্রীলায়ন্সার জানেই না যে তাদের কোন কাজটা নিজের উন্নতির জন্য করা উচিৎ এবং কখন তা সম্পূর্ণ করতে হবে

ফ্রীল্যান্সারদের তিনটা কমন লেভেল রয়েছে

১। আপনি একদম নতুন মানে আপনার সার্ভিস আছে কিন্তু সেল নেই
২। আপনি গ্রোয়িং ফ্রীল্যান্সার মানে রেভেনিউ জেনারেট করে নিয়মিত প্রফিট মার্জিন আছে কিন্তু এখনো প্রপার টীম নিয়ে বিজনেস সেটাপ করতে পারেন নি
৩। আরেকটা বলবো যাদের বিজনেস এবং টিম দুইটাই আছে কিন্তু কীভাবে সাস্টেইন করবে তা নিয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখেন না তাই অনেক কনফিউজড

সমস্যাটা হচ্ছে আমাদের বাংলাদেশ ফ্রীল্যান্সারদের কমিউনিটি আছে কিন্তু সেই কমিউনিটি এর ফ্রীল্যান্সাররা জানেই না যে ফ্রীল্যান্সিং কী এবং ফ্রীল্যান্সিং এর গন্তব্য কী?

আমি তো প্রথম ক্লায়েন্ট দিয়ে শুরু করলাম কিন্তু এর শেষটা কী? কি হবে আমার লাইফে এই ফ্রীল্যান্সিং দিয়ে?

আমরা ভাবি মাসে $1000 হলেই জীবন চলে যাবে কিন্তু ১ থেকে ২ হাজার ডলারেও কোন উন্নতি হচ্ছেনা এমন ফ্রীল্যান্সার অনেক।

এখন আবার নতুন ফ্রীলায়ন্সাররা ভাববে তাহলে আমাদের কী হবে?

আপনি কক্সবাজার যাবেন সেই লক্ষ্য যেমনটা ঠিক করতে হবে ঠিক তেমনি জানতে হবে কক্সবাজার পর্যন্ত যাওয়ার জন্য কি কি প্রসেস অথবা কোন কোন রাস্তা ব্যবহার করতে হবে। কক্সবাজার যাওয়ার বাস, রাস্তা, রেস্ট নেয়াড় সময়, রুট এই সবকিছু যদি জানেন তাহলে কী আপনি গন্তব্যে পৌছতে পারবেন?

ফ্রীল্যান্সিং করে আপনি হাজার হাজার ডলার আয় করবেন এটা খুবই স্বাভাবিক একটি লক্ষ্য। কিন্তু নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুন এই হাজার হাজার ডলার কামানোর রাস্তাগুলো কি আপনি সঠিকভাবে জানেন?

আপনি কি বাৎসরিক হিসেবে অংক করে বের করতে পেরেছেন যে আপনার লাইফে কত টাকা প্রয়োজন এই ফ্রিল্যান্সিং করে?

আমাদের ম্যাক্সিমাম ফ্রিল্যান্সার জানিনা যে একচুয়ালি আমরা কত টাকা আয় করব এবং সেই টাকা আয় করার জন্য এক্সাক্টলি কি কি প্রসেসে স্টেপ বাই স্টেপ আগাতে হবে।

তাই এই আর্টিকেলে আপনি বুঝতে পারবেন যে একজন ফ্রিল্যান্সারের আইডিয়াল লাইফ গোল, টাস্ক এবং উপড়ের তিনটা লেভেল পার করার প্রসেসটা কি। তবে এই ব্লগের উপর সিরিজ আর্টিকেল হবে যেখানে ক্লায়েন্ট পাওয়া থেকে বিজনেস টীম তৈরি করা পর্যন্ত একটি স্মার্ট ফ্রীল্যান্সিং ক্যারিয়ার ডেভেলপের সবকিছুই থাকবে।

প্রথম কথায় আসি যে আমাদের নতুন ফ্রিল্যান্সাররা শুধু একটা জিনিসই চিন্তা করি আর সেটা হচ্ছে কিভাবে আমি ক্লায়েন্ট পাব?

কিন্তু আমরা ভুলে যাই যে একটি ক্লায়েন্ট মানে একটি মানুষ এবং সে আমাকে বাচ-বিচার করেই কাজ দিবে অথবা হায়ার করবে। আমি যদি তার সামনে ভালোভাবে প্রমোশন করতে না পারি তাহলে সে আমার দিকে এট্রাক্ট হবে না হয়তো কোন ভাবে এট্রাক্ট করলাম কিন্তু তার সাথে মিটিং এর সময় তার সামনে ভালোভাবে প্রেজেন্ট না করতে পারলে সে আমাকে রিজেক্ট করবে। হয়তো কোন এক ভেবে ক্লায়েন্টকে বুঝিয়ে কাজ নিয়ে নিলাম কিন্তু সে হয়তো বেশিদিন টিকে থাকবে না।

এই সবগুলো ব্যাপার কিভাবে একসাথে ঠিক করা যায়?

তাই ক্লায়েন্ট পাওয়ার আগে নিজের একটি সার্ভিস মডেল অথবা বিজনেস মডেল থাকা আবশ্যক আর যদি এটা না থাকে তাহলে ক্লায়েন্ট পাওয়া যাবে না।

আপনি একজন ফ্রিল্যান্সার তাই অ্যাকাউন্ট খুললেই ফাইবার কখনোই আপনাকে কাজ দিবে না, আপনাকে কিন্তু গিগ তৈরি করতে হবে বায়ার পাওয়ার জন্য।

আপওয়ার্কে একাউন্ট খুললেই আপনাকে কাজ দিবে না, ভালোভাবে প্রোফাইল তৈরি করে বিড করতে হবে।

এর অর্থ হচ্ছে আপনি মার্কেটপ্লেসে কাজ করেন অথবা মার্কেটপ্লেসের বাহিরে আপনার নিজের একটি সার্ভিস ভালোভাবে প্রেজেন্ট করতে হবে অথবা সার্ভিস দেওয়ার মত প্রসেস থাকতে হবে।

তাই আপনি যদি সার্ভিস মডেল অথবা বিজনেস মডেল ব্যাপারটা বুঝে যান তাহলেই কেবলমাত্র আপনি সঠিকভাবে আপনি আপনার সার্ভিস মার্কেটপ্লেস এবং মার্কেটপ্লেস এর বাহিরে দুই জায়গাতেই মার্কেটিং করে ক্লায়েন্টের কাছে সুন্দর ভাবে প্রেজেন্ট করতে পারবেন এবং লং টার্ম ক্লায়েন্ট পাবেন।

বিজনেস মডেল ব্যাবহার করেই আমি আমার টার্গেটেড ক্লায়েন্টকে মার্কেটপ্লেসের ভিতরে থেকে সহজে পেয়েছিলাম যার কারণে আমার ফাইভার গিগ প্রাইস $500 থেকে $3000 পর্যন্ত চার্জ করতে পারতাম একজন প্রো সেলার এর মতো

এতটুকু পড়ার পর এখনো কিছু মানুষ আছে যারা ভাবছে ভাই সরাসরি কেমনে ক্লায়েন্ট পামু ওইটা কন।

ঠিক এই মানুষদেরকে আমি অভিশাপ দিব নাকি বকা দিব সেটা জানি না, তবে উপরে যেটা লিখেছি ওইটা ছাড়া আমি লিখে দিতে পারি যে একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে সব সময় আপনি কনফিউজড থাকবেন এবং হতাশায় থাকবেন।

তাই সার্ভিস মডেল অথবা বিজনেস মডেল আগেই তৈরি করতে রাখতে হবে।

অন্য আর্টিকেল অথবা ভিডিওতে বিজনেস মডেল টা কিভাবে তৈরি করবেন সেটা বুঝিয়ে দিব

এখন আসি বিজনেস মডেলের পর লাগবে টা কি?

বিজনেস মডেলের পর কি লাগবে তা জানার আগে আবার আরেকটা জিনিস বুঝতে হবে সেটা হচ্ছে বিজনেস মডেলের আগে কি লাগবে।

গুগল সার্চ করে অথবা বিজনেস এক্সপার্ট অথবা বিজনেস কোচের টিউটোরিয়াল দেখে আপনি হয়তবা মডেল তৈরি করবেন কিন্তু সেই বিজনেস মডেল কি আপনার লাইফে কাজে লাগবে কিনা সেটা কিভাবে বুঝবেন?

তাহলে বিজনেস মডেল এর আগে লাগবে হচ্ছে একটা প্রশ্নের সঠিক উত্তর আর সেই প্রশ্নটা হচ্ছে একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনি কত টাকা সামনের ১০ বছরে, ৫ বছরে, ৩ বছরে এবং সামনের এক বছরে আয় করতে চান।

আগামী দশ বছর পর আপনি কি অর্জন করতে চান এই ফ্রিল্যান্সিং লাইফ থেকে?

আমরা অনেকেই আছি 10 বছর পার করে ফেলেছি ইভেন আমি নিজেও কিন্তু ১০ বছর আগে আমি যে প্ল্যান করেছিলাম তা অনেক আগেই সাকসেস হয়েছি।

২০১২ সালে আমার একটাই ধ্যান-ধারণা ছিল আর সেটা হচ্ছে ৫০০ থেকে ১০০০ ডলার আয় করা।

ব্যাস হয়ে গেল লাইফের পূর্ণাঙ্গ সাকসেস, ২০১৪ থেকে এখন পর্যন্ত এই ১০০০ ডলার কতবার আয় করেছি তার হিসেব নেই কিন্তু ২০২০ সালে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আমার গোল ছিল প্রতি মাসে আয় করার সেটা আমি সাকসেস কিন্তু আজ ২০২০ সালে যেটা আমার পাওয়ার কথা ছিল সেটা আমি পাইনি।

২০২০ সালে আমাকে আবার আগামী দশ বছরের জন্য গোল সেট করতে হয়েছে।

এখন পর্যন্ত ২০২০ সালের ওই প্লানিং আর গোল নিয়েই আছি শুধুমাত্র পিছিয়ে গিয়েছি আটটি বছর।

নতুনদের জন্য আমি আবারও বলছি ক্লায়েন্ট পাওয়া অথবা টাকা আয় করা গোল হতে পারে কিন্তু সেই গোলটা অবশ্যই একমাস বা এক বছরের জন্য করবেন না।

আমার ব্লগ ইউটিউবে অনেকের success story দেখবেন যাদের আয় 5 লাখ টাকার উপরে তাদেরও একই সমস্যা ছিল আর সেটা হচ্ছে সামনের ১০ বছরে কি করবে তা জানতো না।

তাই টাকা আয় করলেই দুনিয়ার সবকিছু সল্ভ হয়ে যাবে এটা ভুলেও ভাববেন না।

নতুন হোক অথবা পুরাতন অথবা টিম নিয়ে কাজ করছেন যেই হোক যদি আপনার লাইফে ফাইন্যান্সিয়াল গোল আগামী ১০ বছরে কত হবে তা লিখা না থাকে তাহলে এখনই কাগজ আর কলম নিয়ে লিখে ফেলুন।

“ব্রায়ান ট্রেসি গোল” লিখে যদি ইউটিউবে সার্চ করেন তাহলে তার ওই ভিডিওটা দেখে ভালোভাবে বুঝতে পারবেন যে গোল সেট করা কতটা জরুরী।

সে খুব সুন্দর ভাবে বুঝিয়েছে যে কিভাবে গোল সেট করতে হয়।

যদি একজন ফ্রিল্যান্সারের গোলের কথা আমি বলি তাহলে সামনের ১০ বছরে আমি বলব যে প্রতিমাসে ১০ হাজার ডলার অন্তত আয় করা একজন ফ্রিল্যান্সিং এর 10 বছরের গোল হতেই পারে। তারমানে ১০ বছর পর সে অটোমেটিকলি প্রতি মাসে ১০০০০ ডলার আয় করবে।

ঠিক এই ১০ হাজার ডলার আয় করার জন্য সামনের দশ বছরে আপনাকে কি কি স্টেপ নিতে হবে সেগুলো আগে খুঁজে বের করুন। এবং প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত একটি লিস্ট তৈরি করুন তারপর সেখানে তিনটা প্রশ্ন করুন।

  1. What Is it? 2. Why is it? 3. How is it?

ঠিক এই তিনটি প্রশ্ন লিস্ট দেখে দেখে ইউটিউব google ফোরাম অথবা আপনার সিনিয়র যে কাউকে জিজ্ঞাসা করুন।

লিস্টের যেকোনো একটি বিষয়ে এই তিনটি প্রশ্নের উত্তর যদি আপনি না জানেন তাহলে বুঝবেন আপনার গোল সম্পূর্ণ করার জন্য আপনি অংশে এখনো অজ্ঞ।

ফ্রিল্যান্সিংয়ের দশ বছরে আপনি কোন মাধ্যম দ্বারা ওই পরিমাণ টাকা আয় করবেন সেটা অবশ্যই নির্ধারিত থাকতে হবে।

এখন আরেকটা জিনিস বলি আর সেটা হচ্ছে এক থেকে দুই বছরের মাথায় আমাদের সবার মাথায় আসে যে ইনকামের আরেকটা সোর্স তৈরি করতে হবে আর এইটা ফ্রিল্যান্সারদের মারাত্মক একটি জীবনধ্বংসী সিদ্ধান্ত।

আপনি যতক্ষণ পর্যন্ত একটি বিজনেসের মডেলকে অটোমেটিক করতে না পারছেন তার মানে হচ্ছে আপনার বিজনেস থেকে অটোমেটিকলি আয় হচ্ছে না অথবা বিজনেস অটোমেটিকলি আই বৃদ্ধি করছে না ততক্ষণ পর্যন্ত সেই বিজনেস ছেড়ে আরেকটা বিজনেসে গেলে আপনার দুটি বিজনেসই ধ্বংস হবে।

কারণ যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি ম্যানুয়ালভাবে একটি বিজনেসে এফোর্ট দিবেন ২৪ ঘন্টার মধ্যে আপনি আরেকটি বিজনেসে একই এফোর্ট দিতে পারবেন না কারণ 24 ঘন্টার মধ্যে আপনার শক্তির পরিমাণ সব সময় নির্দিষ্ট থাকে একটি জায়গায় যদি আপনি আপনার শক্তি ব্যয় করে ফেলেন তাহলে শক্তির পরিমাণ কমে যাবে যে কারণে অন্য জায়গায় শক্তি ব্যবহার করতে পারবেন না।

তাই আপনার ২৪ ঘণ্টায় যে শক্তি ঘুম থেকে ওঠার পর সঞ্চিত থাকে ঠিক সেটা খুব ভালোভাবে ফোকাস করে একটা জায়গায় দিতে পারলে উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

যদি আপনি দ্বিতীয় ইনকাম সোর্স খোঁজেন তাহলে আগে ভেবে দেখুন প্রথমটা কি আপনার কাছে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছে কিনা।

যদি প্রথমটা ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয় তাহলে বুঝে নিতে হবে আপনার প্রথম বিজনেসে কোনো না কোনো ফাঁকা রয়েছে যে ফাঁকা আপনি এখনো পূরণ করেননি।

ওই ফাঁকাগুলো দ্রুত পূরণ করুন এবং সেগুলো যদি না জানা থাকে তাহলে সেগুলো খুজে বের করুন খুঁজে বের করার পর সেগুলো পূরণ করার আগে What, Why & How প্রশ্নগুলোর উত্তর জেনে নিন।

ঠিক এভাবে একটি একটি করে প্রতিটি ফাঁকা আপনার প্রথম বিজনেসে ফিলাপ করে নিজের বিজনেসকে অটোমেটিক করার চেষ্টা করুন তারপর অন্য বিজনেসে যাওয়ার প্ল্যান করবেন।

তাই সর্বোপরি প্রথম কাজ হচ্ছে যেহেতু আমরা ফ্রিল্যান্সিং করি তাই আমাদের প্রয়োজন টাকা অথবা ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইসিস দূর করা।

এটাই আমাদের লক্ষ্য তাহলে আমাদের উচিত প্রথম সেট করা যে আমাদের লাইফে ১০ বছর পর কত টাকা হলে আমরা নিজেকে সাকসেসফুল মনে করবো।

এটা একটু ভেবেচিন্তে নির্ধারণ করুন এবং অবশ্যই এটা যেন প্র্যাকটিক্যাল হয় যা দ্বারা আপনার বিজনেস মডেল তৈরি হবে।

আগামী ব্লগে আপনাদের সাথে শেয়ার করব যে কীভাবে আমি ফাইভারের মতো কম্পিটিশনে বেসিক প্যাকেজ এ $500 এবং প্রিমিয়াম প্যাকেজে $2000 চার্জ করতাম এবং প্রচুর ক্লায়েন্ট পেতাম

এই আর্টিকেল পড়ে যদি নতুন কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানাবেন নেক্সট আর্টিকেলে এড করার চেষ্টা করব।

Prince Chowdhury

Started Freelancing Career since 2012 and Converted as an Entrepreneur, Business Coach & Marketing Strategy Enthusiast
Join Our Community:

4 Responses

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Popular post