দীর্ঘদিন একটি কাজ করতে করতে অনেক এসময় নিজের মধ্যে একঘেয়েমি চলে আসে এবং অনেকের জীবনে ভিন্ন লক্ষ্য থাকে তাই পরিবর্তন করতে হয়ে পেশা বা কাজের ধরন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। ফ্রিল্যান্সিং ছেড়ে ব্যবসা শুরু করাও গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত।
ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে একা স্বাধীনভাবে (স্বতন্ত্র) কারো অধীনস্থ না হয়ে কাজ করা। ফ্রিল্যান্সিং কে মুক্ত বা স্বাধীন পেশাও বলা হয়। যারা এই মুক্ত পেশার নিযিক্ত তাদের ফ্রিল্যান্সার বলে। ফ্রিল্যান্সারদের Self employed বা স্ব-কর্মসংস্থানযুক্ত এবং স্বাধীন বা স্বতন্ত্র ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত।
ফ্রিল্যান্সাররা আংশিক সময় বা স্বল্প মেয়াদী ভিত্তিতে অন্যান্য সংস্থার জন্য কাজ করেন, কিন্তু তারা পুর্ণকালীন কর্মচারীদের সমান ক্ষতিপূরণ পান না বা কোন নির্দিষ্ট সংস্থার সাথে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকেন না।
ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধা ও অসুবিধা।
সুবিধাঃ
- ফ্রিল্যান্সিং বা মুক্ত পেশা এমন একটি পেশা যেখানে ফ্রিল্যান্সার নিজে তার ক্লায়েন্ট বা পরিষেবা গ্রহণকারী বাছাই করে নিতে পারেন। ফ্রিল্যান্সার ইচ্চা করলে অনেক ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করতে পারেন আবার কিছু নির্দিষ্ট ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করতে পারেন।
- ফ্রিল্যান্সিংইয়ের আরেকটি সুবিধা হল পছন্দমত কাজের চাপ নেয়া। ফ্রিল্যান্সার যতটা চান ততটা কাজ করতে পারেন এবং এমন প্রকপ্ল পচ্ছন্দ করে নিতে পারেন যা তার কাছে অর্থপূর্ণ।
- ক্লায়েন্ট এবং কাজের চাপের উপর যেমন স্বাধীনতা থাকে তেমনি নমনীয়তা বা Flexibility থাকে যা বেশিরভাগ কর্মজীবির স্বপ্ন। আপনি বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় খন্ডকালীন এবং বাকি বছর পুর্ণকালীন সময় কাজ করতে চান তাহলে আপনার এই সিদ্ধান্ত নিতে নমনীয়তা ও নিয়ন্ত্রন থাকবে।
- ফ্রিল্যান্সিং চাকরিতে স্বাধীনতা আছে। গতানুগতিক অফিসের মত এ পেশায় ৯ থেকে ৫ টা পর্যন্ত কাজ করার বাদ্ধবাধকতা নেই।
- একটি সংস্থার জন্য কাজ করে অন্য শিল্প ও ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা অর্জন করা সম্ভন না। ফ্রিল্যান্সিং পেশা বিভিন্ন প্রকপ্ল এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করার সুযোগ দেয়। বিভিন্ন সংস্থার ও বিষয় নিয়ে কাজ করা কম বিরক্তিকর।
অসুবিধাঃ
- ফ্রিল্যান্সার হিসেবে এক টানা ২ থেকে ৩ বছর পর কাজ করায় হতাশা চলে আসে।
- আয় বৃদ্ধি করা কঠিন হয়ে যায়।নতুন ক্লায়েন্ট খুঁজে না পেলে বা পুরাতন ক্লায়েন্টের কাছ থেকে কাজ না পেলে আয় কমে যায়।
- নতুন কোন বিষয় এবং প্রযুক্তি সম্পর্কে জানার ও শেখার সময় পাওয়া যায়না।
- স্বাস্থ্য এবং পরিবেশ অনুযায়ী ফ্যামিলি প্রবলেম দেখা দেয়। ফ্রিল্যান্সারদের দীর্ঘক্ষণ এক জায়গায় বসে কাজ করার ফলে কোমরে ব্যাথাসহ নানা ধরনের শারিরীক সমস্যা হয়। দিনের বেশির ভাগ সময় কম্পিউটারের সামনে বসে থাকার ফলে দৈনন্দিন কাজে তেমন সময় দেয়া যায় না।
- দিনের বেশিরভাগ সময় কম্পিউটারের সামনে থাকায় একা ঘরে বসে থাকতে হহয়, যা একাকিত্ব বোধ এবং বিষন্নতা সৃষ্টি করে ।
- নতুন টিম তৈরি করা না গেলে সারাদিন বসে বসে একা কাজ করতে হয়। অনেক সময় দক্ষ লক না পেলে একাই কাজ করতে হয় যা মানষিক চাপ বৃদ্ধি করে।
ব্যবসা হচ্ছে একটি সংস্থা বা বাণিজ্যিক সত্তা, পেশাদার , দাতব্য বা শিল্পকর্মের সাথে জড়িত অন্য কোন সত্তা। মুনাফা অর্জনের জন্য পণ্য বা পরিষেবা সরবরাহের সাথে জড়িত ক্রিয়াকলাপই ব্যবসা।
ব্যবসার সুবিধা অসুবিধা
সুবিধা:
- কারো অধীনে চাকরি করলে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা অনুভব করতে হয়। কিন্তু নিজের ব্যবসা শুরু করলে সব দায়িত্ব এবিং ক্ষমতা আপনার হাতেই তাই কোন ধরনের সীমাবদ্ধতা নেই। পছন্দমত যেকোনো সিদ্ধান্ত নেবার স্বাধীতা রয়েছে ব্যবসায়।
- নিজের বয়বসা শুরু করে আপনি কঠোর পরিশ্রম করে সফলতা পেতে পারেন এবং নিজেই এই কঠোর পরিশ্রমের ফল ভোগ করতে পারেন।
- নিজের ব্যবসায় আপনি নিজেই নিজেকে নিয়োগ করবেন তাই কাজ হারানোর ভয় নেই।
- অনেক বেশি আর্থইক ঝুঁকি থাকা সত্তেও । নিজের ব্যবসা আপনাকে অনেক বেশি অর্থ উপার্জনের সুযোগ দেয়।
- নিজের ব্যবসায় আপমি সমস্ত ক্ষেত্রে জড়িত থাকবেন জার ফলে ব্যবসায়িক কাজ কর্ম সম্পর্কে সম্পুর্ণ ধারণা অর্জনের সুযোগ তৈরি করে।
অসুবিধাঃ
- প্রাথমিক অবস্থায় ব্যবসা শুরু করার জন্য অনেক পরিশ্রম কতে হবে।
- ব্যবসার জন্য এককালিন বিনিয়োগ প্রয়োজন যা অনেকের কাছে থাকে না।
- অনেক সময় বছরের পর বছর বেতন বা কোন লাভ নাও পেতে পারেন। যদি ব্যবসা টি সফল না হয় তাহলে তা অর্থনঈতিকভাবে খুব বাজে অবস্থায় ফেলবে আপনাকে।
- ব্যবসায় ব্যর্থতা আপনার মানিসিক ও শারীরিকভাবে সমস্যা ফেলতে পারে। যা আপনাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য হতাশার রাজ্যে পাঠিয়ে দিবে।
একজন ফ্রিল্যান্সারে লক্ষ্য স্বাধীনভাবে চাকরী করা , দুর্দান্ত কাজ করা, ধীরে ধীরে নিজের চাহিদা বাড়ানো যাতে ঘন্টা/ প্রকপ্ল প্রতি বেতন বেরে যায়। অপরদিকে ব্যবসা শুরু করে ভালো পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে দীর্ঘমেয়াদী মুনাফা করার নেটওয়ার্ক তৈরি করা। যা স্থির, স্থিতিশীল এবং ঝুকিপূর্ণ নয়।আপনার ব্যক্তিত্ব এবং আপনার লক্ষ্যের উপর আপনি কোন টি বেছে নিবেন।
আপনি যদি এমন কেউ হন যে কিছু সময়ের জন্য আর উপার্জন বিলম্ব করতে ইচ্ছুক এবং এমন একটি ব্যবসা গড়ে তুলতে চান যা কার্যকর হবে এবং সাফল্য লাভ করবে তাহলে ব্যবসা পক্ষে ভাল হবে। নিখুত কোন আইডিয়া, প্রয়োজনীয় লোকবল , বিনিয়োগ নিয়ে কাজ শুরু করলে সফলতা পাওয়া যায়।
ফ্রিল্যান্সিং | ব্যবসা |
তাৎক্ষণিক উপার্জন | বিলম্বিত উপার্জন |
একটি মাত্র পরিষেবা প্রদান করে | ব্যবসার সাথে সম্পর্কিত অতিরিক্ত সব পরিষেবা |
কি কাজ করছেন তার উপর নিয়ন্ত্রন নেই | কি কাজ করবেন তা নিজে নির্ধারণ করা |
সময়ের উপর ব্যবসা, একবার অর্থ পাওয়া যায় | টেকসই কিছু করা যা বারবার অর্থ প্রদান করবে |
বিনিয়োগ অল্প | এককালীন বড় বিনিয়োগ |
আপনি ফ্রিল্যান্সার বা ব্যবসার মালিক যে সিদ্ধান্তই নেন না কেন, এই মূহুর্তে আপনার পক্ষে সবচেয়ে ভাল কি কাজ করছে তা পছন্দ করুন। ব্যবসা শুরু করে সিঁড়ি দিয়ে উপরের দিকে যাওয়ার জন্য যদি সিদ্ধান্ত নেন তবে নিজেকে সেখানে পৌছানোর জন্য সময় এবং স্থান দিন।
One Response
this post is too much important. I m very satisfied with the talk. Thank you, prince bro